মিনি কম্পিউটার

- তথ্য প্রযুক্তি - কম্পিউটার (Computer) | | NCTB BOOK

মিনি কম্পিউটার হলো এমন একটি কম্পিউটার যা মেইনফ্রেম কম্পিউটার এবং মাইক্রো কম্পিউটারের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী অবস্থান ধারণ করে। ১৯৬০-এর দশকে প্রথম মিনি কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছিল, এবং এগুলো সাধারণত ছোট ব্যবসা, গবেষণা ল্যাব, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হতো, যেখানে বড় মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহারের প্রয়োজন ছিল না। মিনি কম্পিউটার আকারে ছোট এবং সাশ্রয়ী হলেও মেইনফ্রেমের কিছু ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা সরবরাহ করতে সক্ষম ছিল।

মিনি কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

১. ছোট আকার এবং উচ্চ ক্ষমতা:

  • মেইনফ্রেমের তুলনায় মিনি কম্পিউটার আকারে ছোট এবং স্থান কম দখল করে। এগুলি সাধারণত ডেস্ক বা ছোট রুমের আকারের হয়।
  • মিনি কম্পিউটারগুলোতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসিং ক্ষমতা থাকে, যা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক, গবেষণামূলক এবং বাণিজ্যিক কাজ করতে সক্ষম।

২. সাশ্রয়ী এবং ব্যবহার উপযোগী:

  • মেইনফ্রেমের তুলনায় মিনি কম্পিউটারগুলো কম খরচে কেনা যায়, এবং এগুলি পরিচালনা করাও সহজ।
  • এগুলো ছোট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, গবেষণা ল্যাবরেটরি, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের উপযোগী ছিল, যেখানে কম শক্তি এবং সাশ্রয়ী সমাধানের প্রয়োজন ছিল।

৩. মাল্টি-ইউজার এবং মাল্টি-টাস্কিং ক্ষমতা:

  • মিনি কম্পিউটারগুলোতে মাল্টি-ইউজার সাপোর্ট এবং মাল্টি-টাস্কিং ক্ষমতা থাকে, যার মাধ্যমে একাধিক ব্যবহারকারী একসাথে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে।
  • এতে থাকা মাল্টি-টাস্কিং ফিচার ব্যবহার করে একাধিক প্রোগ্রাম একসাথে চালানো যায়।

মিনি কম্পিউটারের উদাহরণ:

  • DEC PDP-8: এটি ১৯৬৫ সালে ডিজিটাল ইক্যুইপমেন্ট কর্পোরেশন (DEC) তৈরি করেছিল এবং এটি প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল মিনি কম্পিউটার। এটি ছোট আকার এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
  • IBM System/3: IBM এর তৈরি মিনি কম্পিউটার যা ছোট এবং মধ্যম আকারের ব্যবসার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
  • HP 3000: হিউলেট প্যাকার্ডের তৈরি একটি জনপ্রিয় মিনি কম্পিউটার, যা ব্যবসায়িক এবং বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতো।

মিনি কম্পিউটারের ব্যবহার:

  • ব্যবসা এবং অ্যাকাউন্টিং: মিনি কম্পিউটারগুলো ছোট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হতো অ্যাকাউন্টিং, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট এবং অন্যান্য ডেটা প্রসেসিংয়ের জন্য।
  • বিজ্ঞান এবং গবেষণা: গবেষণা ল্যাবরেটরিতে মিনি কম্পিউটার বৈজ্ঞানিক গাণিতিক সমস্যার সমাধান এবং তথ্য বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হতো।
  • শিক্ষা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষার জন্য মিনি কম্পিউটার ব্যবহৃত হতো, কারণ এগুলো কম খরচে এবং পরিচালনায় সহজ ছিল।

মিনি কম্পিউটারের গুরুত্ব:

  • মিনি কম্পিউটার প্রযুক্তি কম্পিউটার ব্যবহারের একটি নতুন ধারা প্রবর্তন করেছিল, যা ছোট প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রচলন বাড়ায়।
  • এগুলোর মাধ্যমে মেইনফ্রেমের বিপরীতে ছোট এবং সাশ্রয়ী সমাধান পাওয়া যায়, যা ছোট ব্যবসা এবং গবেষণা ক্ষেত্রগুলিতে কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ায়।
  • মাল্টি-ইউজার এবং মাল্টি-টাস্কিং ক্ষমতা মিনি কম্পিউটারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, যা পরবর্তী সময়ে সার্ভার এবং ওয়ার্কস্টেশনের বিকাশে প্রভাব ফেলে।

মিনি কম্পিউটারের অবসান:

  • ১৯৮০-এর দশকে মাইক্রো কম্পিউটার (পার্সোনাল কম্পিউটার) জনপ্রিয় হয়ে ওঠার সাথে সাথে মিনি কম্পিউটারের ব্যবহার কমতে শুরু করে। মাইক্রো কম্পিউটারগুলো আরও ছোট, সাশ্রয়ী, এবং ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় এগুলি বাজার দখল করে।
  • আধুনিক যুগে মিনি কম্পিউটারগুলো কার্যত বিলুপ্ত, কারণ সার্ভার এবং ওয়ার্কস্টেশন প্রযুক্তি মিনি কম্পিউটারের কাজগুলোর উন্নততর সমাধান প্রদান করে।

সারসংক্ষেপ:

মিনি কম্পিউটারগুলো কম্পিউটার প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। মেইনফ্রেম কম্পিউটার থেকে ছোট আকারের এবং সাশ্রয়ী সমাধান প্রদান করে, মিনি কম্পিউটার প্রযুক্তি ছোট ব্যবসা, গবেষণা, এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের জন্য একটি বিপ্লবী সমাধান হিসেবে কাজ করেছে। যদিও আজ মাইক্রো কম্পিউটার এবং সার্ভার প্রযুক্তি মিনি কম্পিউটারের জায়গা নিয়েছে, তবুও এর ভূমিকা প্রযুক্তির বিকাশে উল্লেখযোগ্য।

Content updated By
Promotion